টিনের দোকানের ব্যবসা থেকে ওয়ালটনের মালিক!

বিশ্বব্যাপী নামিদামি উদ্যোক্তাদের গল্প তো প্রায়ই শোনা যায়। তাদের নিয়ে পত্রপত্রিকায় নানা রকম লেখা পড়ে মুগ্ধ হন পাঠক। ধিরুভাই আম্বানি কিংবা বিল গেটসের ভিড়ে হারিয়ে যায় আমাদের দেশি উদ্যোক্তাদের সংগ্রামের গল্প। চলুন তেমনই একজনের গল্পটা আজ জানা যাক। তিনি হলেন ওয়ালটনের মালিক এস এম নজরুল ইসলাম। টাঙ্গাইলের বাসিন্দা ছিলেন।

ওয়ালটনের মালিক এস এম নজরুল ইসলাম

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের গোসাই জোয়াইর গ্রামে ১৯২৪ সালের তার জন্ম। সরকার মো. আতোয়ার আলী তার বাবা। পারিবারিক ভাবেই ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। অল্প বয়সেই ব্রিটিশ আমলে তিনি কর্ণফুলী পেপার মিলের ঠিকাদারির কাজ করতেন। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ছিলেন সেই পেশায়। বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন।

টাঙ্গাইল পৌর এলাকার আদালত রোডে ছিল নিজের টিনের ব্যবসা। কপাল ভাল ছিল না। দেখা দেয় মন্দা। শুরু হয় আর্থিক দৈন্য। নতুন কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। উদ্যোগ নেন নতুন ব্যবসার। ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসা করার চিন্তা আসে মনে। যেই কথা, সেই কাজ। ট্রাইকন টিভি তৈরি ও বাজারজাতকরা শুরু করেন।

২০০২ সালে এসে তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে ওয়ালটন দেশের এক নম্বর ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব জমিতে গড়ে উঠেছে ওয়ালটন হাইটেক ও ওয়ালটন মাইক্রোটেক করপোরেশন নামের দু’টি কারখানা। এখান থেকে ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস প্রস্তুত হয়ে বাজারজাত হচ্ছে দেশজুড়ে।

ওয়ালটনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ড্রিম পার্ক ইন্টারন্যাশনাল, মার্সেল ও ডিজিটেক। এস এম নজরুল ইসলাম নানা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন। তার মালিকানাধীন জমির ওপরই নির্মিত হয়েছে গোসাই জোয়াইর কমিউনিটি ক্লিনিক। আর এই হাসপাতালের যন্ত্র-সরঞ্জাম আসবাবপত্রও এসেছে তার অর্থায়নে।

একাধারে তিনি টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক, জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, জেলা সার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও গোসাই জোয়াইর আজিম মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। সব কিছুর ক্ষেত্রে ‘ছিলেন’ বলার কারণ হল গত ১৭ ডিসেম্বর, রোববার রাত নয়টা বেজে ৪০ মিনিটে তিনি চলে গেছেন জীবন নদীর ওপারে। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ‍মৃত্যু হয়।

তিনি রেখে গেছেন পাঁচ ছেলে দুই মেয়ে। তার ছেলে এস এম নুরুল আলম রেজভী, এস এম শামসুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম, এস এম রেজাউল আলম ও মেয়ে নিলুফা বেগম, সেফালী খাতুন। আর রেখে গেছেন অসামান্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ হওয়ার অনন্য এক নজির।

Post Progress

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sign in

No account yet?

Facebook Email Instagram YouTube
We use cookies to improve your experience on our website. By browsing this website, you agree to our use of cookies.