ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ মার্কেটিং স্ট্রাটেজি

ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় এয়ার লাইন্স কোম্পানি ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ যাদের লন্ডনের মার্কেট শেয়ার খুব ভালো দখলে কিন্তু তাদের নর্থ আমেরিকাতে সেল নেই বললেই চলে। তাদের নর্থ আমেরিকার ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছে। কি করবে?

তাঁরা চলে গেল অগিলভি এর কাছে, গিয়ে বলল আমাদের নর্থ আমেরিকার সেলস খুব খারাপ আমাদের জন্য এমন কিছু করে দাও যাতে আমরা নর্থ আমেরিকাতে আমাদের সেলস ১০% বাড়াতে পারি।

অগিলভি পুরো ব্যাপারটা বুঝতে কিছুদিন সময় নিল। আসলে অগিলভি নতুন একটা প্র্যাকটিস করার জন্য সময় নিল যা ব্রিটিশ এয়ার এর কেউ জানতো না। অগিলভি নর্থ আমেরিকা থেকে উড়ে যাওয়া সব ফ্লাইট এর ডাটা নিয়ে স্টাডি করা শুরু করল। তাঁরা যেই যেই ব্যাপারগুলো পেল তা হলঃ

১। নর্থ আমেরিকা থেকে উড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ৯০%-ই যাচ্ছে ইন্ডিয়াতে।
২। আর শুধুমাত্র ইন্ডিয়াতে ২ বিলিয়ন ডলারের ফ্লাইট যাচ্ছে।
৩। এখানেই তাঁরা মার খাচ্ছে কারন এই ৯০% এর মধ্যে ব্রিটিশ এয়ার এর শেয়ার হল ৩%।

British airways category imagery

ব্যস, ডাটা নেয়া শেষ হয়ে গেল। এবার আসলো সেই ডাটা নিয়ে খেলা করার সময়। এই ডাটা কে কাজে লাগিয়ে কীভাবে কন্টেন্ট তৈরি করা যায় আর সেই কনটেন্ট কে ভাইরাল করে একটা বাজ সৃষ্টি করা যায়।

মার্কেট এ যতগুলো প্রতিযোগী ছিল সবাই তাদের সেলস কনটেন্ট গুলোতে হয় ভালো ভালো অফার প্রমোট করছে না হয় কোন ইন্ডিয়ান মেয়ে কে দিয়ে শাড়ি পড়িয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছে এমন কিছু ছবি দিয়েই প্রচারনা চালাচ্ছে।

অগিলভি উল্টো রাস্তা দিয়েই তাদের কাজ শুরু করল। তাঁরা এমন একটা ক্যাম্পেইন স্টার্ট করল যা নর্থ আমেরিকা থেকে উড়ে যাওয়া সব গুলো ইন্ডিয়ান কে যাতে নাড়া দেয় আর সেই সাথে একটা অফারও দিয়ে দিল।

কি সেই ক্যাম্পেইন? সেই ক্যাম্পেইন এর নাম ছিল “A Ticket to Visit Mom” — পুরো ভিডিওটিতে কোন অভিনেতা বা অভিনেত্রী অভিনয় করেনি। সত্যিকারের একটা ঘটনাকেই দেখানো হয়েছে। কোন মেকি কিছু ছিল না।

একজন মা, যার ছেলে ১৭ বছর বয়সে আমেরিকা চলে যায়, কে বলা হয় আপনি আপনার ছেলের প্রিয় ডিসটি রান্না করুণ, আমরা ব্রিটিশ এয়ার সেটা আপনার ছেলের কাছে নিয়ে যাব।

তো, ভদ্র মহিলা সেই ডিসটি রান্না করে তার ছেলের জন্য, রান্না করার সময় তার ছেলের অনেক স্মৃতি তিনি বলতে থাকেন। আর একি সাথে অপেক্ষা করতে থাকেন ব্রিটিশ এয়ার এর লোকের জন্য যে কিনা তার রান্না করা খাবার ছেলের জন্য নিয়ে যাবে।

কিন্তু সেই মা কে অবাক করে দিয়ে সেই দিন ব্রিটিশ এয়ার এর কোন লোক আসে নি খাবার নিতে। এসেছিল সেই মহিলার ছেলে নিজেই। ছেলে কে দেখে মা চিৎকার করে কেঁদে দেয়। সেই দৃশ্য না হয় নিজেই দেখে নিন। আমি নীচে লিঙ্ক দিয়ে দিব ।

এই ভিডিও টি আজ পর্যন্ত নর্থ আমেরিকা সব চেয়ে ভাইরাল হওয়া কোন প্রোমোশন ছিল। আর পুরো দুনিয়ার ৪র্থ ভাইরাল হওয়া ভিডিও ছিল মনে হয়।

আর এই ভিডিও ভাইরাল হবার পরই শুরু হয় একটার পর একটা নতুন অফার ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজ এর। এর বারতে থাকে তাদের সেলস। বলতে পারেন তাদের সেলস বেড়েছিল কত টুকু? বেশি না মাত্র ৬৫%, জী যেখানে তাদের সেলস ছিল না বললেই চলে সেখানে তাঁরা সেলস বাড়িয়েছিল ৬৫% আর তাঁরা মার্কেট শেয়ার নিয়ে নেয় ৩৮% যা পূর্বে ছিল ৫%।

কীভাবে করল এই কাজ অগিলভি? সিমপ্লি, ডাটা এনালাইসিস। তাঁরা ডাটা কে প্রাধান্য দিয়েছিল ইন্ডিয়ান মার্কেট কে ফোকাস করে, ইমশোন কে কাজে লাগিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেছিল আর ভাইরাল করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া কে ব্যবহার করেছিল। ব্যস, খেলা শেষ।

এভাবেই স্ট্রাটেজিক মানুষগুলো বড় বড় ব্র্যান্ড গুলোকে কৌশল শিখিয়ে দিয়ে ব্যবসাকে প্রসারিত করছে। একটা ক্যাম্পেইন করার আগে অনেকগুলো ব্যাপার নিয়ে ভেবে তারপর সেটা লঞ্চ করতে হয় তবেই সেটা ক্লিক করে।

Post Progress

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Sign in

No account yet?

Facebook Email Instagram YouTube
We use cookies to improve your experience on our website. By browsing this website, you agree to our use of cookies.